হামিম হাফিজুল্লাহ্ | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 35 বার পঠিত
পুঁজিবাজারের অসঙ্গতি চিহ্নিত করে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও আস্থা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন(বিসিএমআইএ)।
গতকাল (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিসিএমআইএ’র উদ্যোগে আয়েজিত ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও সুরক্ষা বৃদ্ধির করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। সভায় দেশের অর্থনীতি, পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় জরুরী করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি পাটির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সাংবাদিক ও গবেষক ফজলুল বারী এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দিদারুল আলম ভূঁইয়া।
বিসিএমআইএ এর আলোচনায় রাজিকুজ্জামান রতন বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তাদের সহযোগীরা পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীরা তাদের জীবনধারণের উপায় হারিয়েছেন এবং অনেকেই চরম হতাশায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাজার কারসাজি, আর্থিক অনিয়ম এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা বারবার ক্ষতিগ্রপ্ত হয়েছেন। রতন বলেন, সরকারের উদাসীনতা এবং দুর্নীতি বাজারকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি। তিনি দ্রুত বাজার স্থিতিশীল করতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং পুঁজিবাজারকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সালমান এফ রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পলাতক স্বৈরাচার পুঁজিবাজারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এমন একজন ব্যক্তিকে, যিনি নিজেই হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তারই রাজনৈতিব সঙ্গী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘শুটকির হাটে বিড়াল চৌকিদার।’ ফুয়াদ আরও বলেন, সালমান এফ রহমান এখন জেলে থাকলেও গত ১০০ দিনে পুঁজিবাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে একটি নতুন পাবলিক কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, নতুন কমিশনকে শুধু ঘরে বসে নাস্তা খেয়ে বা কাগজে সংস্কার প্রস্তাব নয়, বরং সরাসরি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বাজার ব্যবস্থাপনায় আস্থাহীনতা ও সুশাসনের অভাব থাকায় এটি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে কার্যকর ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি ।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিএমআইএ-এর প্রতিনিধি সকল আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ সকল সুপারিশ বাস্তবায়ন অপরিহার্য।” ১. পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ। ২. কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনতে কারসাজি বন্ধ এবং কঠোর নজরদারি। ৩. ইস্যু মূল্যের নিচে থাকা কোম্পানির পরিচালকদের ইস্যু মূল্যে শেয়ার ক্রয় বাধ্যতামূলক করা। ৪. ক্ষতিগড় বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান এবং আর্থিক পুনর্গঠনের সুযোগ। ৫. নতুন মিউচুয়াল ফান্ড চালু করে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো। ৬. বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং তারল্য নিশ্চিত করতে নতুন মার্কেট মেইকার লাইসেন্স প্রদান। ৭. আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানো। ৮. কোম্পানির পে-সমেন্ট শেয়ার ৫ বছরের জন্য লক ইন রাখা। ৯. প্রথম ৫ বছরে ন্যূনতম ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান বাধ্যতামূলক করা। ১০. কোম্পানির তালিকাভুক্তির আগে ও পরে সম্পদ ও দায়ের হিসাব স্বচ্ছভাবে প্রকাশ। ১১. বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা। ১২. বেক্সিমকো গ্রুপের জিএমজি এয়ারলাইন্সের ৩৫০ কোটি টাকা ক্ষতিগড় বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে কার্যকর ব্যবস্থা। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাভাজন লোকদের নিয়ে পাবলিক কমিশন গঠন করে বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
Posted ৯:২৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy